international

Loading...
অভাবের তাড়নায় নিজেকে ট্রেনের নিচে সপে দিলেন মা

অভাবের তাড়নায় নিজেকে ট্রেনের নিচে সপে দিলেন মা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি



দুই মেয়ের পড়ালেখা আর সংসারের অন্যান্য খরচ জোগাতে না পেরে ট্রেনের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন এক মা। আজ রোববার লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম খাদিজা বেওয়া। ৩৫ বছর বয়সী এই নারীর বাড়ি উপজেলার বড়াবাড়ি গ্রামে।

ঘটনার প্রত্যক্ষর্দশী স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের জানান, আজ সকাল ১০টার দিকে বুড়িমারী-লালমনিরহাট রেলরুটের আদিতমারী রেলষ্টেশন থেকে একটি ট্রেন ছেড়ে যায়। স্থানীয় লালব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ করে বিধবা খাদিজা দৌঁড়ে গিয়ে ট্রেনের সামেনে শুয়ে পড়েন। মুহূর্তেই দু’টুকরা হয়ে যায় তার দেহ।

খবর পেয়ে আশপাশের মানুষ এসে তাকে চিনতে পারেন। খাদিজা বড়াবাড়ি গ্রামের মৃত লাভলু মিয়ার স্ত্রী। স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের সব খরচ বহন করতে হতো খাদিজাকে। কিন্তু স্বামীর কোনো সঞ্চয় না থাকায় প্রতিদিনের খরচ জোগানো তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।

ধারণা করা হচ্ছে, এক পর্যায়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন এই মা।

ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের বলেন, খাদিজার স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্ট করে চলছিল পরিবারটি। আজ সকালে মেয়ের স্কুলে যাওয়ার কথা বলে খাদিজা বোরকা পরে বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্কুলে না গিয়ে তিনি লালব্রিজের রেললাইন এলাকায় চলে যান।

লালমনিরহাট রেলওয়ে থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, এ ব্যাপারে একটি ইউডি মামলা হয়েছে। নিহতের লাশ তার পরিবারের নিকট দেয়া হয়েছে।
ভারতে কলকাতার আরো একটি স্কুলে কন্যা শিশুকে যৌন নিগ্রহ BBC News বাংলা

ভারতে কলকাতার আরো একটি স্কুলে কন্যা শিশুকে যৌন নিগ্রহ BBC News বাংলা

ভারতের কলকাতায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর ওপরে লাগাতার যৌন নিগ্রহ চালানোর অভিযোগে পুলিশ এক নৃত্য-শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে।




তার বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন নিগ্রহ-রোধ আইন - 'পকসো'র বেশ কয়েকটি ধারা অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে।

এ নিয়ে গত কয়েক মাসে কলকাতার তিনটি নামী স্কুলের তিনটি কন্যা-শিশুর ওপরে স্কুলের মধ্যেই যৌন নিগ্রহ চালানোর অভিযোগ উঠল।

আজ শুক্রবার সকাল থেকেই দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক এলাকায় খ্রিস্টান মিশনারিদের পরিচালিত 'কারমেল প্রাইমারী স্কুল'-এর সামনে অভিভাবকরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

তাদের অভিযোগ, দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীটির ওপরে তার নাচের শিক্ষক যে মাস-খানেক ধরেই যৌন নিগ্রহ চালাচ্ছেন, সেটা জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় নি স্কুল। উল্টো, যৌন নিগ্রহের প্রমাণ চাওয়া হয়।

তারা প্রশ্ন তুলেছেন মেয়েদের স্কুলে কেন পুরুষ শিক্ষক রাখা হবে, তা নিয়েও।

এর আগে দুটি স্কুলের নিচের ক্লাসের ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হওয়া সত্ত্বেও কারমেল স্কুলের ভেতরে কোনো সিসিটিভি লাগানো হয় নি বলে ক্ষোভ জানান অভিভাবকরা।

অভিযুক্ত শিক্ষককে তাদের হাতে তুলে দেওয়ারও দাবী জানাতে থাকেন তারা।

বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর বিএনপি এবার কেন হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়নি

রোহিঙ্গা 'গণহত্যার খবরের কারণে' রয়টার্সের সাংবাদিক আটক

পুলিশ যখন ওই অভিযুক্ত নাচের শিক্ষক সৌমেন রানাকে স্কুল থেকে বার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন অভিভাবকদের হাতে গণপিটুনি খান তিনি। অন্যদিকে স্কুলের ভেতরেই আটকা পড়ে বহু ছাত্রী।

পরে যৌন নিগ্রহের শিকার ছাত্রীর বাবা-মাকেও থানায় নিয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা নেয় পুলিশ।

স্কুল কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমকে শুধু জানিয়েছে যে অভিযুক্ত শিক্ষককে তারা সাসপেন্ড করেছে আর এই বিষয়ে পুলিশই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জেরায় অবশ্য অভিযুক্ত শিক্ষক দাবী করেছেন যে তিনি কোনো ছাত্রীর ওপরে যৌন নিগ্রহ চালান নি। অত ছোট বাচ্চার সঙ্গে যৌন নিগ্রহ করার প্রশ্নই ওঠে না বলেও তিনি জানিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রগুলি বলছে।


ভারতে শিশুদের ওপরে যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের হাজার হাজার ঘটনা সামনে আসছে, এবং সংখ্যাটা প্রতিবছরই বাড়ছে। ফাইল ফটো
ভারতে শিশুদের ওপরে যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের হাজার হাজার ঘটনা সামনে আসছে, এবং সংখ্যাটা প্রতিবছরই বাড়ছে।

জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালে প্রায় কুড়ি হাজার শিশু ধর্ষিত হয়েছে আর যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরও প্রায় ১২,০০০ শিশু। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুটির পরিচিত জনেরাই যৌন নির্যাতন চালান বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

শুধু কন্যা-শিশু নয়, পুত্র-শিশুদের ওপরেও যৌন নির্যাতন চলে ব্যাপক হারে, যদিও একবারই মাত্র, ২০০৭ সালে এ নিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।

সমাজকর্মীরা জানাচ্ছেন, যত যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তার প্রায় ৫০ শতাংশই ছেলেদের ওপরে ঘটে।

সুখী হওয়ার পাঁচটি উপায়: অধ্যাপকের পরামর্শ

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন, এমন সমাজকর্মীরা মনে করছেন, যৌন নির্যাতন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে আগে যেসব ঘটনা সামনে আসত না, এখন তার থেকে অনেক বেশী সংখ্যায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়ছে।

কিন্তু তবুও বহু ঘটনা এখনও জানানো হয় না লোকলজ্জার ভয়ে।

তবে অনেক স্কুলেই বাচ্চাদের 'গুড টাচ, ব্যাড টাচ'-এর পাঠ দেওয়া শুরু হয়েছে, শিশুদের শেখানো হচ্ছে, কেউ যদি খারাপভাবে আদর করে বা ছোঁয়, তাহলে তারা যেন চেপে না গিয়ে মায়ের কাছে বলে দেয়।

যদিও এই শিক্ষাদান এখনও পর্যন্ত মোটামুটিভাবে বেসরকারি স্কুলগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
চাঞ্চল্যকর রুপা ধর্ষণ ও হত্যায় চারজনের ফাঁসি, একজনের সাত বছরের কারাদণ্ড BBC News বাংলা

চাঞ্চল্যকর রুপা ধর্ষণ ও হত্যায় চারজনের ফাঁসি, একজনের সাত বছরের কারাদণ্ড BBC News বাংলা

বাংলাদেশে চাঞ্চল্যকর রুপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে বাসের চালক এবং সহকারীসহ চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। এ মামলায় একজনের সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।



এছাড়া যে বাসে ঐ ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল, সেই বাসটি জব্দ করে রুপার পরিবারকে দিয়ে দেবার আদেশ দিয়েছে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশুবিষয়ক ট্রাইব্যুনাল।

গত বছরের ২৫শে অগাস্ট বগুড়ায় পরীক্ষা দিয়ে বাসে কর্মস্থল ময়মনসিংহে যাবার পথে বাসের চালক, সহকারী এবং সুপারভাইজার জাকিয়া সুলতানা রুপাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়।

ঘটনার পরে রুপার লাশ উদ্ধার করে, ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইলে দাফন করা হয়।



পরে ২৮শে অগাস্ট রুপার ভাই মধুপুর থানায় এসে লাশের ছবি দেখে বোনকে শনাক্ত করেন।

অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এ মামলায় অভিযোগ গঠন, সাক্ষী ও যুক্তিতর্কের জন্য মাত্র ১৪ দিন সময় নেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর রাস্তাঘাট ও গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা হীনতার বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহ বিভিন্নভাবে ক্ষেত্রে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

বাংলাদেশে রাতের গণপরিবহনে নারীরা কতটা নিরাপদ? BBC News বাংলা

বাংলাদেশে রাতের গণপরিবহনে নারীরা কতটা নিরাপদ? BBC News বাংলা

বাংলাদেশে নারী যাত্রীদের অনেকেই বলছেন, রাতে চলাচলের ক্ষেত্রে পরিবহন সংশ্লিষ্ট লোকজন কিংবা পুরুষ যাত্রীদের দ্বারা শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন তারা।






একদিকে নিরাপত্তা নিয়ে আস্থাহীনতা অন্যদিকে সামাজিক অসচেতনতার কারণে দিন দিন নির্যাতন ও নিগ্রহের ঘটনা বাড়ছে।

নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর দৃশ্যমাণ তৎপরতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নারীদের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই।

রাত ন'টায় ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত রিমা ইসমাত।

মোহাম্মদপুর থেকে তার গন্তব্য বেড়িবাধ পার হয়ে বসিলা। এলাকাটা বেশ নির্জন।

তাই রিমা ইসমাতও বাসে ওঠেন নানা হিসেব নিকেষ করে।

আরও পড়ুন: চাঞ্চল্যকর রুপা ধর্ষণ ও হত্যায় চারজনের ফাঁসি

নদীতে বোমা পাওয়ার পর বন্ধ লন্ডনের সিটি এয়ারপোর্ট

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কতটা নিরাপদ?

তিনি বলছিলেন, ''আমি বাসে উঠি। যদি দেখি অনেকে নেমে যাচ্ছে এবং যাত্রী খুব কম তখন আমিও নেমে যাই। কারণ সবসময়ই একটা ভয় কাজ করে।''

মিসেস ইসমাতের আশংকা রাতের যাত্রায় নির্জন রাস্তায় যৌন হেনস্থার শিকার হতে পারেন তিনি।

এমন আশংকার ভিত্তিও আছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণপরিবহণে নারীদের উপর যৌন নিপীড়ন হবার অনেক ঘটনাই সামনে এসেছে।

মিসেস ইসমাতের নিজেরও আছে তিক্ত অভিজ্ঞতা।

'একদিনের ঘটনা, আমার ডানপাশে একজন পুরুষ যাত্রী বসা। বামপাশে আরেকজন দাঁড়ানো যাত্রী। ডানপাশে যিনি বসা তাকেও আমি ট্যাকল করতে পারছি না, অন্যদিকে দাঁড়ানো যাত্রীও আমার উপর চলে আসছেন। আমি বললেও শোনে না। অন্য পুরুষ যাত্রীরাও নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।"
রাতে নিরাপত্তা বলতে পুলিশের টহল গাড়ি
বাংলাদেশে দূরপাল্লার বাসগুলোতে রাতের বেলায় যেসব নারী যাত্রী ভ্রমণ করেন তাদের জন্য কী নিরাপত্তা আছে?

যতটুকু দেখা যাচ্ছে, এসব পরিবহনে নিরাপত্তা বলতে সড়কে পুলিশের টহল আর বাসে কোম্পানি নিযুক্ত সুপারভাইজার।

রাজধানীর গাবতলীতে যশোরগামী একটি বাসের চালক অবশ্য জানালেন, তাদের বাসে নারী যাত্রীরা যথেষ্ট নিরাপদ।

"আমাদের বাসে যদি একলা মহিলা যাত্রী থাকে। তাহলে আমরা চেষ্টা করি, তার পাশের সিটে একজন মহিলা যাত্রী দেয়ার। না দেয়া গেলে সেক্ষেত্রে আমাদের সুপারভাইজার আছে। আমরা খেয়াল রাখি।"

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গত বছরের ২৫শে আগস্ট দেশজুড়ে আলোচিত কলেজছাত্রী রুপা হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিলো চলন্ত বাসের ভেতরে বাস চালক ও সহযোগীদের মাধ্যমেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বলছিলেন, বাসে খোদ পরিবহন সংশ্লিষ্টরাই অনেক সময় ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ান।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "একদিন নাইট কোচে আমি একাই ঢাকা থেকে চাপাইনবাবগঞ্জ যাচ্ছিলাম। পাশের সিট খালিই ছিলো। রাত যখন একটু বাড়লো, তখন বাসের সুপারভাইজার এসে দেখা গেল বারবার আমার সঙ্গে গল্প করার চেষ্টা করছে।"

"একটা পর্যায়ে রাত যখন আরো গভীর হলো তখন সে আমার পাশের সিটটায় এসে বসে পড়লো। আমি যখন তাকে বকা দিলাম এবং আমার নানু যিনি এলাকায় বেশ প্রভাবশালী তার পরিচয় দিলাম তখন সে ভয় পেয়ে চলে যায় এবং বলে আপু রাগ করিয়েন না। কিন্তু এরপরও পুরোটা পথ আমি সে রাতে ঘুমাতে পারিনি।"

বেসরকারি সংগঠন একশন এইডের একটি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে দিনের বেলাতেই যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে নানারকম হেনস্থার শিকার হন নারী যাত্রীদের একটা বড় অংশ।

তাদের জরিপে, বাসে পুরুষ যাত্রীদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন ৪২ শতাংশ নারী যাত্রী। এছাড়া পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫৩ শতাংশ নারী যাত্রী।

এরসঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাতে নারীযাত্রীদের হয়রানি, ধর্ষণ এমনকি হত্যার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে ভীতি বাড়ছে।

ফলে দিনের বেলা নারীদের স্বাভাবিক চলাচল দেখা গেলেও রাতে তা অনেকটাই কমে আসে।

রাজধানীর সদরঘাট থেকে সাভার রুটে চলাচলকারী স্বজন পরিবহনের একটি বাসে কথা হয় দুইজন যাত্রীর সঙ্গে।

এর মধ্যে একজন নারী যাত্রী বলছিলেন, " কিছু ছেলেপেলে আছে, নানারকমভাবে তারা হয়রানি করে। মানে মহিলাদের হয়রানি তো করেই।"

আরেকজন পুরুষযাত্রী বলছিলেন, "রাতে মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আমাদের পুরুষদেরও মানসিকতা পরিবর্তন দরকার।"

কিন্তু গণরিবহনে নারীদের নিরাপত্তাবোধের এই অভাব দূর করার কি কোন উপায় আছে?


নারী অধিকারকর্মী কাশফিয়া ফিরোজ বলছেন, পুরো নগরীটাকেই নারীবান্ধব হতে হবে
নারী অধিকার কর্মী কাশফিয়া ফিরোজ বলছিলেন, "যে শহরে দিনের বেলা নারীরা নিরাপদ নয়, সে শহরে রাতেও নিরাপদ হবে না। নিরাপদ করতে হলে শহরটাকেই নারী বান্ধব করতে হবে। বাসের যারা হেলপার, ড্রাইভার আছেন তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। যেন বিপদে পড়লে নারীরা তাদেরকে রিপোর্ট করতে পারে এবং তারাও নারীদের সহায়তায় এগিয়ে আসে।"

ভারতের দিল্লীতে নির্ভয়া হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের ঘটনার পর সেখানে নারীরা যে কতটা অনিরাপদ তা আলোচিত হয়েছিলো বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশে রূপার ঘটনাটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে এখানেও নির্জন রাস্তায় একাকী নারী সমানভাবে অনিরাপদ। বাংলাদেশে যেখানে সর্বক্ষেত্রে নারীপুরুষ সমান অধিকার, সমান অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়, সেখানে গণপরিবহণে একাকী নারীর নিরাপত্তাবোধের ইস্যুটি নিসন্দেহে বড় একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
বাংলাদেশে যে চলন্ত বাসে ধর্ষণ, সেই বাসের মালিকানা পাবে রূপার পরিবার BBC News বাংলা

বাংলাদেশে যে চলন্ত বাসে ধর্ষণ, সেই বাসের মালিকানা পাবে রূপার পরিবার BBC News বাংলা

রূপা ধর্ষণ এবং হত্যা মামলায় মাত্র ছয় মাসের মধ্যে যেভাবে আসামীদের বিচার শেষ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশে খুব বিরল। যে চলন্ত বাসে এই অপরাধ হয়েছিল, সেটিও নৃশংসতার শিকার তরুণীর পরিবারকে দিতে বলেছেন বিচারক। কোন অপরাধের রায়ে এ ধরণের নির্দেশ, সেটিও সচরাচর দেখা যায় না।



ভারতের রাজধানী দিল্লিতে চলন্ত বাসে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে আশ্চর্য মিল ছিল রূপা ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনায়। রূপাকেও চলন্ত বাসে ধর্ষন করা হয়েছিল, এরপর হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছিল জঙ্গলে। মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই সেই ঘটনার বিচার হলো।

নির্ভয়া ধর্ষণের ঘটনা যেভাবে ভারতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল, রূপাকে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনাও একইভাবে আলোড়িত করে বাংলাদেশের মানুষকে।

ঘটনার পরপরই বাসটির চালক হেলপার সহ ৫জনকে আটক করে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

এরপর গত ২৯শে নভেম্বর আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো আদালতে।

টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি এ কে এম নাছিমুল আক্তার বলছেন ঘটনার ১৭৩ দিনের মধ্যে মাত্র ১৪ কর্ম দিবসেই সব কার্যক্রম শেষ করে আজ চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় দিলো আদালত।

তিনি বলেন, "পাঁচ আসামীর মধ্যে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড আর একজনের সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাকে এক লাখ জরিমানা করেছে আদালত। এ টাকা এবং যে বাসে ঘটনাটি ঘটেছে সে বাসটি আদালতের আয়ত্তে নিয়ে রূপার পরিবারকে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।"

নাছিমুল আক্তার বলেন মাত্র ১৪ কর্ম দিবসে মামলাটি নিষ্পত্তি করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ ট্রাইব্যুনাল।

যেভাবে ঘটেছিল:

ময়মনসিংহের একটি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিভাগে কাজ করতেন রূপা, পাশাপাশি পড়তেন একটি ল কলেজে।

বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গত বছরের ২৫শে অগাস্ট বাসে ময়মনসিংহ ফিরছিলেন তিনি।

পরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায় মধুপুর এলাকার জঙ্গলে।

বাংলাদেশে রাতের গণপরিবহনে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
পরিচয় না পেয়ে প্রথমে বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন করা হলেও খবরটি ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যমে।

দুদিন পর মধুপুর থানায় গিয়ে ছবি দেখে নিজের বোনকে সনাক্ত করেছিলেন রূপার ভাই হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক।

আসামীদের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তি থেকেই জানা গিয়েছিলো যে রূপা যে বাসে ফিরছিলেন সে বাসটি ঐদিন রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা অতিক্রম করার পর সব যাত্রী নেমে যায়।

এরপর বাসটি কালিহাতি এলাকায় পৌঁছালে বাসের মধ্যেই ধর্ষণের শিকার হন রূপা।

মৃত্যু নিশ্চিত করে তাকে মধুপুর এলাকায় জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দেয় বাসের হেলপারসহ অন্যরা।

রায়ে প্রতিক্রিয়া:

রূপার ভাই হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক বিবিসিকে বলেছেন রায়ে ন্যায়বিচার পেয়েছে তাদের পরিবার।

তিনি বলেন, "আমরা সন্তুষ্ট। এখন আমরা চাই রায় দ্রুত কার্যকর হোক। তাহলেই আমার বোন অর্থাৎ রূপার আত্মা শান্তি পাবে। আর উচ্চ আদালতে গেলেও রায়টি যেনো বহাল থাকে,আমরা সেটিই চাইছি"।

তবে আসামী পক্ষের আইনজীবী শামীম চৌধুরী বলছেন তারা এ রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

তিনি বলেন, "আমরা প্রত্যাশিত ন্যায় বিচার পাইনি। এ মামলায় রাষ্ট্র পক্ষ কোনভাবেই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো এবং আশা করি সেখানে ন্যায় বিচার পাবো"।

আরও পড়ুন: রাতের গণপরিবহনে নারীরা কতটা নিরাপদ?

নদীতে বোমা পাওয়ার পর বন্ধ লন্ডনের সিটি এয়ারপোর্ট

তবে রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া যাই হোক রুপা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে ও গণ পরিবহনের নারীদের নিরাপত্তা হীনতার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছিলো।

বিশেষ করে যেসব শিক্ষিত নারীরা দূরদূরান্তে শিক্ষা বা কাজের প্রয়োজনে গণ পরিবহনে যাতায়াত করেন তারা কতটুকু নিরাপদ তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছিলো।

আর সে কারণেই মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেকেই আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়তাতেই এগিয়ে এসেছিলো যাতে রূপা ধর্ষণ ও হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
'খালেদা জিয়াকে দীর্ঘমেয়াদে কারাবন্দী রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সরকার'  BBC News বাংলা

'খালেদা জিয়াকে দীর্ঘমেয়াদে কারাবন্দী রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সরকার' BBC News বাংলা

বাংলাদেশে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পর তাঁকে সরকার দীর্ঘমেয়াদে কারাবন্দী রাখতে চায় বলে আশংকা করছেন দলটির নেতারা।






খালেদা জিয়াকে গত সপ্তাহে একটি দুর্নীতির মামলায় আদালত দোষী হিসেবে সাজা দেয়ার পর তিনি এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী।

তাঁর আইনজীবীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে একটি আপিল মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু রায়ের সত্যায়িত কপি এখনো পর্যন্ত না পাওয়ায় আপিল আবেদন নিয়ে এখনো বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেন নি।

কিন্তু এরই মধ্যে তিন বছরেরও বেশি সময়ের পুরোনো কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের একটি নাশকতার মামলায় বিএনপি নেত্রীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

তাঁর পক্ষের অন্যতম একজন আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জানিয়েছেন, নাশকতার মামলাটির গ্রেফতারি পরোয়ানা এখন কারাগারে পাঠিয়ে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

২০১৫ সালের শুরুতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের টানা ৯০ দিনের অবরোধের সময় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় আটজন নিহত এবং অনেক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল।

খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়ার প্রতিবাদে বিএনপি কর্মীদের বিক্ষোভ
সেই নাশকতার মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ চার্জশিট দিয়েছিল গত নভেম্বরে। তাতে খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামী করে মোট ৭৭জনকে আসামী করা হয়েছিল।

সেখানকার আদালত চার্জশীট গ্রহণ করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল।

মামলাটির তদন্তকারি এবং ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন বলেছেন, আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত গ্রেফতার হলে গ্রেফতারী পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট কারাগারে পাঠিয়ে তা যুক্ত করা হয়।

বিএনপি নেত্রীর দুর্নীতির মামলার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে তাঁর আইনজীবীরা আপিল করার প্রস্তুতি শেষ করে রেখেছেন। রায়ের সার্টিফাইড কপি ছাড়া সেই আবেদন তাঁরা করতে পারেছেন না।

তাঁরা আগামীকাল মঙ্গলবার সার্টিফাইড কপি পাওয়ার আশা করছেন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি দুর্নীতির এবং ১১টি নাশকতার মামলাসহ মোট ৩১টি মামলা আছে। এরমধ্যে নাশকতার চারটি মামলায় কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতারী পরোয়ানা হয়ে রয়েছে।

তাঁর অন্যতম আইনজীবী এবং বিএনপির সিনিয়র নেতা মওদুদ আহমেদ বলছিলেন, তাদের নেত্রী কারাবাস দীর্ঘায়িত করতে সরকার এখন নাশকতার মামলাগুলোতেও গ্রেফতার দেখাচ্ছে।

"নাশকতার মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখাচ্ছে। যাতে তাঁর কারাবাস কয়েকদিন দীর্ঘ করা যায়। এটা সরকার তাদের রাজনৈতিক কৌশল থেকে করছে।"

তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজী নন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।তিনি বলেছেন, আইন অনুযায়ীই বিষয়গুলো এগুচ্ছে।

"তিনি সুনির্দিষ্ট মামলায় সাজা পেয়ে জেলে গেছেনএবং অন্যান্য আরও কিছু সুনির্দিষ্ট মামলায় ইতিমধ্যে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে আছে। আমাদের কোন ইচ্ছাই নেই যে আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন কিংবা একাধিকবার তিনি প্রাইম মিনিস্টার ছিলেন, তাঁকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য আমরা জেলখানায় নিয়ে যাব।এরকম কোন অভিপ্রায় আমাদের নেই।আদালত থেকে যে সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত শুধু অনুসরণ করছি।"

বিএনপি তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে রাজনৈতিক কর্মসূচিও অব্যাহত রেখেছে। সোমবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির নেতা কর্মিরা মানববন্ধন করেছেন।

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকেও তাদের মানববন্ধন করার খবর পাওয়া গেছে।

Featured Post

বাংলাদেশে রাতের গণপরিবহনে নারীরা কতটা নিরাপদ? BBC News বাংলা

বাংলাদেশে নারী যাত্রীদের অনেকেই বলছেন, রাতে চলাচলের ক্ষেত্রে পরিবহন সংশ্লিষ্ট লোকজন কিংবা পুরুষ যাত্রীদের দ্বারা শারীরিক কিংবা মানসিক নির্য...

Top international News

loading...

Popular Posts